স্মৃতিচিহ্ন
কামিনী রায়
ওরা ভেবেছিল মনে আপনার নাম
মনোহর হর্ম্মরূপে বিশাল অক্ষরে
ইষ্টক-প্রস্তরে রচি চিরদিন তরে
রেখে যাবে। মূঢ় ওরা, ব্যর্থ মনস্কাম !
প্রস্তর খসিছে ভূমে প্রস্তরের 'পরে,
চারিদিকে ভগ্ন স্তূপ, তাহাদের তলে,
লুপ্ত স্মৃতি শুষ্ক তৃণ কাল-নদী জলে
ভেসে যায় নামগুলি, কেবা রক্ষা করে।
মানব হৃদয়-ভূমি করি' অধিকার,
করেছে প্রতিষ্ঠা যারা দৃঢ় সিংহাসন,
দরিদ্র আছিল তারা, ছিল না সম্বল
প্রস্তরের এতো বোঝা জড়ো করিবার ;
তাদের রাজত্ব হের অক্ষুণ্ণ কেমন—
কাল-স্রোতে ধৌত নাম নিত্য সমুজ্জ্বল ৷৷
কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩): বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত মহিলা কবি কামিনী রায় বরিশাল জেলার বাসন্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম চণ্ডীচরণ সেন। তিনি অতি শৈশবকাল থেকে কবিতা রচনায় প্রয়াসী হন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'আলো ও ছায়া' মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রকাশিত হয়। তিনি বেথুন কলেজ থেকে সংস্কৃতে বি.এ. পাস করে ওই কলেজেই শিক্ষাব্রতীর কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হলো—‘পৌরাণিকী’, ‘দীপ ও ধূপ’, ‘জীবনপথে’, ‘মাল্য ও নির্মাল্য”, ‘অশোক সঙ্গীত' প্রভৃতি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি 'জগত্তারিণী স্বর্ণপদক' লাভ করেন।